হস্তরেখা ‘র সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
হস্তরেখা ‘র সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
হাজার হাজার বছর আগে-যখন মঙ্গোলিয়া ও কিরঘিজ ভূমির দিগন্তবিস্তৃত স্তেপ্ প্রান্তরে প্রাগৈতিহাসিক ম্যামথের দল বিচরণ করত, কাস্পিয়ান হ্রদের উত্তাল জলরাশিকে মথিত করবার জন্য এগিয়ে আসত ডাইনোসরেরা- ভারত, চীন ও মিশরের মানব সভ্যতার বিন্দুমাত্র ঈশারা মেলেনি প্রস্তর যুগের মানুষের মনে-সে সময়েও বিশ্বাস করেছিল তার ভাগ্যকে, বিশ্বাস করেছিল জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনপ্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হত–এক অদৃশ্য কিন্তু অলৌকিক শক্তির ইচ্ছায়।
দিবসের দাবদাহে এবং নিকষ-নিবিড় অন্ধকারের বুকে মৃদু জ্যোৎস্নার আলতো স্পর্শ তাকে আশ্চর্যজনক ভাবে নিয়ে যেত একটা ভাবরাজ্যে-_এবং সে দেখত দিনের সূর্য ও রাতের চন্দ্রের উদয়-অস্ত মাঝে তার ভাগ্যও জড়িত। কিন্তু তখনো সে সেই রহস্যাবৃত অলৌকিক শক্তির উৎস খুঁজে পায়নি – পদে পদে বাধা ও পথে পথে আঘাত খেয়ে মানুষ যখন সভ্যতার প্রথম প্রদীপ জ্বালাতে সক্ষম হল, তখন সে একটা আলো দেখল, সে আলোয়, দেখল সূর্য ও চন্দ্র তার কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ মাইল দূরে থেকেও অমোঘ শক্তিতে তাকে নিয়ন্ত্রিত করছে।
হস্তরেখার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
শুরু হল এর কারন অন্বেষণ – বুঝতে পারল সূর্যের সুনির্দিষ্ট কৌশলে জগতের পরিবর্তন, দিন ও রাতের, গমনাগমন, ঋতুর পরিবর্তন। আর চন্দ্রের চমৎকার আকর্ষণে আকুল হয়ে ওঠে সাগর-নদী – মানুষের শিরা-উপশিরায় প্রবাহিত রক্ত ধারা। আরো আরো কত কিছুর সন্ধান পেল।
নিজের ভাগ্য সম্বন্ধে সে যা-কিছু জ্ঞানলাভ করল তা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই এবং সেটা হল -আকাশের অগণিত নক্ষত্র-গ্রহ দ্বারা মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রিত। সেই গ্রহতারাদের নিয়ে জ্যোতিষশাস্ত্র (Astrology) রচিত হল-আর সেখান থেকে হাতড়ে বাস্তববাদী বিজ্ঞানীরা সৃষ্টি করলেন জ্যোতির্বিজ্ঞান (Astronomy)। প্রয়োজনই আবিষ্কারের জননী। এবং জ্যোতিঃশাস্ত্র হল জ্যোতির্বিজ্ঞানের পিতা। বিশ্বের প্রথম জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছিলেন জ্যোতিঃশাস্ত্রের সমর্থক। কারণ তিনি বছরের পর বছর ধরে সারারাত নক্ষত্রখচিত আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে গ্রহ নক্ষত্রদের তালিকা তৈরি করেছিলেন।
এখন কে এই দুরুহ শাস্ত্র নিয়ে মাথা ঘামিয়েছেন? এর একমাত্র উত্তর- ভারতবর্ষের ঋষি। ঋষি শব্দটি এখানেই বহুবচনেই ব্যবহার করছি। ঋষি হল এখানে “ঋষিমণ্ডলী’। তারা অরণ্যে, পর্বতে, উদার আকাশের নীচে বহু বর্ষব্যাপী তপস্যা করে জ্যোতিঃশাস্ত্র সম্বন্ধে বিরাট জ্ঞান আহরণ করে জগতের মাঝে, অমৃতস্য পুত্রাঃ-র – কাছে ঘোষণা করলেন-চন্দ্র-সূর্য-তারা ও গ্রহরা আমাদের ভাগ্য নিয়ন্তা। জ্যোতিঃশাস্ত্র গ্রহনক্ষত্র ও রাশি প্রভৃতির ক্রিয়াকলাপে ভরা। এবং মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এঁদের ভাব ফুটে ওঠে। তাই হস্তরেখা, ললাট প্রভৃতি দেখে শুরু হল ভাগ্যবিচার।
Comments
Post a Comment