হিন্দুধর্মে ১০৮ সংখ্যাকে অতি পবিত্র মানা হয়।

 হিন্দুধর্মে ১০৮ সংখ্যাকে অতি পবিত্র মানা হয়। দুর্গাপুজোতে ১০৮টি পদ্ম লাগে , দেবীর গলায় ১০৮টি বেলপাতার মালা পরানো হয় , নারায়ণ পুজোতে ১০৮টি তুলসী পাতা দেওয়া হয় কিংবা জপের মালাতে ১০৮টি রুদ্রাক্ষ থাকে। বিভিন্ন মন্দিরের সন্ত সমাজে মহামণ্ডলেশ্বরের নামের আগে ‘' শ্রী শ্রী ১০৮ '’ দিয়ে শুরু হয়। হিন্দুধর্ম মতে ১০৮ সংখ্যাটি দ্বারা ব্রহ্মকে প্রকাশ করা হয়, তাই হিন্দুধর্মে ১০৮ সংখ্যাটির এত মাহাত্ম্য। বাংলা ভাষার বর্ণমালার অক্ষরের সাংখ্যিক স্পন্দন অনুসারে , ব্রহ্ম= ব+র+হ+ম= ২৩+২৭+৩৩+২৫= ১০৮। প্রাচীন সংস্কৃত ভাষায় ৫৪টি অক্ষর ছিল। প্রতিটি বর্ণের পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ , অর্থাৎ শিব ও শক্তি বর্তমান। সেই অনুযায়ী ৫৪x২= ১০৮। 


প্রাচীন মুহূর্ত শাস্ত্র অনুসারে, সময়কে ১০৮টি উপলব্ধিতে বিভাজিত করা হয়েছিল। ৩৬ অতীত , ৩৬ বর্তমান , ৩৬ ভবিষ্যৎ। 


হিন্দুধর্মের পঞ্চদেবদেবী , যাঁরা শাস্ত্রানুসারে সর্বাগ্রে পূজিত ( গণেশ , বিষ্ণু , শিব , কৌশিকী বা চণ্ডী এবং সূর্য বা আদিত্য ) , প্রত্যেকেরই অষ্টোত্তর শতনাম সংকীর্তন করা হয়ে থাকে। শ্রীকৃষ্ণ সর্বদা ১০৮ জন গোপিনীর সঙ্গে লীলাখেলায় রত থাকতেন। 


১০৮-কে সংস্কৃতে বলা হয় ‘' হর্ষদ সংখ্যা '’। কারণ, এই সংখ্যাকে তার সংখ্যা-সমষ্টি দিয়ে বিভাজিত করা যায়। ১+০+৮=৯, আবার ১০৮/৯=১২। ৯এর যেকোন গুনিতক এর যোগফল ৯ ( ৯×১=৯ , ৯×২=১৮=১+৮=৯ , ৯×৩ = ২৭=২+৭= ৯ , ইত্যাদি ) আয়ুর্বেদ ও যোগ শাস্ত্রমতে , মানবদেহে মোট ১০৮টি পথ ধরে চালিকাশক্তি এসে হৃদপিণ্ডকে সচল রাখে। কালজয়ী মহাকাব্য মহাভারতে প্রত্যেকটিতেই ১৮টি অধ্যায় আছে। এমনকি শ্রীরামচরিত মানস ৯ দিনে পাঠ সম্পূর্ণ করতে হয় , যাকে ‘' নবাহ্ন পরায়ণ '’ বলা হয়।

 

নটরাজের তাণ্ডবের থেকে প্রেরিত হয়ে ‘' ভরতনাট্যম " -এর সৃষ্টি সেই নৃত্যশাস্ত্রে ১০৮টি হস্ত ও পদ্মমুদ্রা আছে। সারা ভারতে তন্ত্রপীঠের সংখ্যাও ১০৮। 


ধর্মীয় রীতিতে বৈচিত্র থাকলেও হিন্দু, বৈষ্ণব, বৌদ্ধ, শিখ ও জৈন ধর্মে জপমালার পূঁতির সংখ্যা সর্বক্ষেত্রেই ১০৮। কেন ১০৮টি পুঁতি জপমালাতে থাকে তার একটি সুন্দর ব্যাখ্যা বৌদ্ধ ধর্মে রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে , 

একটি সূত্র— ৬ x ৩ x ২ x ৩= ১০৮, অর্থাৎ ৬ হল মানুষের ছয়টি ইন্দ্রিয় ( চক্ষু , কর্ণ , নাসিকা , জিহ্বা , ত্বক ও চিন্তা ) , 

৩ হল ত্রিকাল ( অতীত , বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ) , 

২ হৃদয়ের দু’টি অবস্থা ( নির্মল ও কলুষিত ) এবং 

৩ হল মানুষের মনের অবস্থা ( ইচ্ছা , অনিচ্ছা ও উদাসীনতা )। 

জপের মূল উদ্দেশ্য হল ইন্দ্রিয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা , মনের পরিচালনা করা এবং কালের ঊর্ধ্বে নিজের হৃদয়কে প্রতিস্থাপন করা ... ভৈরবী চক্র সম্পর্কে:-

কালের সূক্ষ্মতম অবয়বের নাম ‘লব’। ১ লব = ০.১১ মি.লি. সেকেন্ড। পদ্মের একটি দল ভেদ করিতে যতটা সময় লাগে তাহার নাম ‘লব’। 

৮বিট = ১বাইট। ১ বাইট ২৫৬ স্থরে তথ্য উপস্থাপন করতে পারে। ১ বাইট = ১ অক্ষর। ১০ বাইট = ১টি শব্দ। ১০০ বাইট = ১টি বাক্য।

স্থুল বর্ণের উচ্চারণ কালকে ‘মাত্রা’ বলা হয়। সৃষ্টির উৎসই ‘বিন্দু’, আবার, অসীমের প্রবেশ-দ্বার হইল ‘বিন্দু’। চরম আনন্দাবস্থায় চিত্ত বৃত্তি-শূণ্য হয়, ইহাই গুপ্ত রহস্য। পঞ্চ-শূণ্যের প্রথম-শূণ্য হইল ‘বিন্দু’। পূর্ণ বিন্দুর বেগের মাত্রা-ই হইল ‘অর্দ্ধ-মাত্রা’। তাহার পর, ‘অর্দ্ধ-চন্দ্র’ ইহার মাত্রা = ১/৪মাত্রা। ইহার পর, ‘নিরোধিকা’ ইহার মাত্রা = ১/৮মাত্রা। তাহার পর, ‘নাদ’ ইহার মাত্রা = ১/১৬মাত্রা। তাহার পর ‘নাদান্ত’ ইহার মাত্রা = ১/৩২মাত্রা। 

ইহার পর, ‘শক্তি-স্থান’ ইহার মাত্রা = ১/৬৪মাত্রা। তাহার পর, ‘ব্যাপিনী’ ইহার মাত্রা = ১/১২৮মাত্রা। তাহার পর, ‘সমনা’, ইহার মাত্রা = ১/২৫৬মাত্রা। ইহার পর ‘উন্মনা’, ইহা মনের অতীত তাই উন্মনার উচ্চারণকাল নাই বলা যাইতে পারে।

শ্রীচক্রে আমরা দেখিতে পাই - চারিটি বৃহৎ ত্রিভূজ উর্দ্ধমুখী যাহাকে শিব-ত্রিভূজ বলা হয় ও পাঁচটি বৃহৎ ত্রিভূজ নিম্নমুখী যাহা শক্তি-ত্রিভূজ রূপে রহিয়া উভয় উভয়ের সহিত যৌগিক অবস্থা বা যুগ্মাবস্থা সৃষ্টি করিয়াছে। ৪টি উর্দ্ধমুখী ত্রিভূজের মোট ৪x৩ = ১২টি শূণ্য স্থানের বা দ্বাদশ রাশি নির্দ্দেশ করিতেছে, আর, ৫টি নিম্নমুখী ত্রিভূজ ৫x৩ = ১৫টি তিথি বা চন্দ্রকলা নির্দ্দেশ করিতেছে। আর, এই উভয়ের যোগফল ১২+১৫ = ২৭টি খণ্ডরূপ “নক্ষত্র” নির্দ্দেশ করিতেছে। পুনরায়, শিব ও শক্তি ত্রিভূজ গুলি একে অপরের মধ্যে প্রবেশ করার বা যুক্ত হওয়ার কারণে, - সর্ব্বমোট ৪৩টি ত্রিভূজ সৃষ্টি করিতেছে।

দুইটি রেখার ছেদ-বিন্দু গুলিকে “সন্ধি” বলা হয়। শ্রীচক্রে এই রূপ ২৪টি সন্ধি আছে। ২৪ঘন্টায় ১অহোরাত্র। এই সন্ধিক্ষণ গুলি শিব-শক্তি যুগ্মাবস্থার নির্দ্দেশক। ইহাই আবার, মহাকালের ২৪টি বাহু। 

তিনটি রেখার ছেদ-বিন্দু গুলিকে “মর্ম-স্থান” বলা হয়। শ্রীচক্রে এই রূপ ১৮টি মর্ম-স্থান বিন্দু আছে, যেখান থেকে ৬টি (রিপু) রেখা বেরিয়েছে। মর্ম-স্থান গুলি জীব দেহে (৯x২ = ১৮) অনুলোম-বিলোমে ১৮টি শক্তি-কেন্দ্রের নির্দেশক। সুতরাং, ১৮x৬ = ১০৮ সংখ্যা পাওয়া গেল, ইহাই জীবের বিভ্রম বা অজ্ঞতার সংখ্যা।

বর্ণমালার ৫৪ বর্ণ, অনুলোম বিলোমে ৫৪x২ = ১০৮ সংখ্যা। আরও বিশদ ভাবে বলিলে, - 'অ' হইতে 'অঃ' - পর্য্যন্ত ১৬টি স্বরবর্ণ, 'ক' হইতে 'হ' - পর্য্যন্ত ৩৩টি ব্যাঞ্জন বর্ণ ও ৫টি মেরু-বর্ণ (১৬+৩৩+৫) = ৫৪ বর্ণ X ২ (অনুলোম ও বিলোমে) = ১০৮ সংখ্যা। ইহাই বীজ-মন্ত্র জপের বা মালা জপের সংখ্যা। প্রাচীন ভারতে সত্যদ্রষ্টা ঋষিগণ আত্ম-তত্ত্ব উপলব্ধি করিয়া সাধণপন্থার সূত্র নির্নয় করিয়াছিলেন। কিন্তু, কালক্রমে আজ তা লুপ্তপ্রায় হইয়া গিয়াছে। কিছু কিছু সাধণের প্রণালী ‘বীজমন্ত্র’ – রূপে গুপ্ত ভাবে রক্ষা করা রহিয়াছে। ‘মন্ত্র’ অর্থে ‘নাদ’ বা শব্দব্রহ্মকে অর্থাৎ ‘চতুর্বাক’-কেই বুঝায়। অভিব্যাক্ত নাদ-কে উপলব্ধি করাই মন্ত্রসাধণা। নাদ সর্ব-ব্যাপি। দেহ মধ্যে নাদ যেমন সমস্ত স্নায়ু, কোষ, অনুতে পরিব্যাপ্ত তেমন, বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি বস্তু, জড়পদার্থ, চেতন-জীব, উদ্ভিদ, এমনকি মহা-শূণ্য স্থানের সর্ব্বত্র পরিব্যাপ্ত রহিয়াছে। ‘আমি’ই নাদ রূপে সমগ্র বিশ্বের সর্ব্বত্র পরিব্যাপ্ত রহিয়াছি, আমি নিত্য, আমার জন্ম নাই, মৃত্যুও নাই, বিশ্বের সর্ব্বত্রই আমার সত্তা পরিব্যাপ্ত রহিয়াছে, - ইহাই নাদের অনুভূতি বা ‘নদন’। অভিব্যাক্ত নাদ অনুভূতিতে আসিবার সাথে সাথে ‘শক্তিপাত’ অর্থাৎ, মহাজাগতিক চৈতণ্য শক্তি (Nondual Consciousness) জাগরিত হইতে শুরু করিবে।


হর হর মহাদেব.

Comments

Popular posts from this blog

How to cross check the authenticity of an Astrologer | Best astrologer in kolkata

Discover the Power of Palmistry and Astrology in Your Life

Sexual Orientation and Gender Identity LGBTQ+