Shibrattri
মহাশিবরাত্রি পূজা বিধিঃ
=================
শিবকে বলা হয় আশুতোষ। অর্থাৎ আশু বা খুব তাড়াতাড়ি অল্পেই তুষ্ট হন যিনি! ফলে, সব পুরাণ মতে তাঁকে তুষ্ট করার জন্য পঞ্চাক্ষর বীজমন্ত্র 'নমঃ শিবায়'-ই যথেষ্ট! নিষ্ঠা সহকারে, ভক্তি ভরে নমঃ শিবায়-এর উচ্চারণেই তাই সাঙ্গ হয় শিবপূজার যাবতীয় বিধি।
কিন্তু মহাশিবরাত্রির পূজা অন্য দিনের শিবপূজার চেয়ে একটা দিক থেকে আলাদা। এটি ব্রত অর্থাৎ, এটি বিশেষ পূজার দিন। যে কোনও ব্রত পালনের কিছু বিশেষ নিয়ম থাকেই। মহাশিবরাত্রিরও রয়েছে। যেহেতু সারা বছরব্যাপী শিবপূজার মধ্যে এটিই সর্বশ্রেষ্ঠ, তাই এই ব্রত পালন শুরু হয় মহাশিবরাত্রির আগের দিন থেকে। শেষ হয় পরের দিন। অতএব, সেই ব্রত পালনের জন্য তৈরি হওয়া যাক আজ থেকেই!
=> ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথি-ই শিবপুরাণ মতে মহাশিবরাত্রি। তাই ত্রয়োদশী তিথি থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে এই বিশেষ পূজার জন্য। শিবপুরাণ মতে এবং মহাশিবরাত্রি ব্রতপালন বিধি অনুসারে ত্রয়োদশীতে এক বেলা নিরামিষ আহার খেয়ে থাকতে হয়। যাতে চতুর্দশীতে উদরে আহারের কণামাত্রও না থাকে!
=> মহাশিবরাত্রির দিন একেবারে সকালেই ঘুম থেকে উঠে পড়া নিয়ম। ঘুম থেকে উঠেই স্নান করে নিতে হয়। কালো তিল ভেজা জলে স্নান করাই বিধেয়। শিবপুরাণ মতে, তাতে শরীর শুদ্ধ হবে।
=> স্নান শেষ হয়ে গেলে সঙ্কল্পের পালা। কেন না, এই পূজা এবং ব্রত পালন করতে হয় নিজেকে সংযত রেখে। মনে মনে সঙ্কল্প করুন --- চতুর্দশীর সারা দিন এবং রাত আপনি শুদ্ধ শরীরে এবং মনে থাকবেন। থাকবেন উপবাসে। সঙ্কল্প হয়ে গেলে "নমঃ শিবায়" বীজমন্ত্রে প্রণাম জানান শিবকে। তাঁর আশীর্বাদ কামনা করুন। যাতে আপনার সঙ্কল্প রক্ষা হয়।
=> অনেকে আজকাল দুপুরের মধ্যেই শিব
পূজা সেরে নেন। কিন্তু যখন বলছি মহাশিবরাত্রি, তখনই স্পষ্ট- এই পূজার আদর্শ সময় রাত। সারা রাত ধরে চলে মহাশিবরাত্রির ব্রত। তাই সন্ধেবেলাতেও একবার স্নান করে শুদ্ধ হয়ে পূজার জোগাড় করুন। হাতের কাছে গুছিয়ে রাখুন জল, দুধ, দই, ঘি, মধু, ফুল, বেলপাতা, গোলাপ জল, চন্দন বাটা, কুঙ্কুম বা সিঁদুর, ধূপ, ঘিয়ের প্রদীপ, পাঁচটি ফল, মিষ্টি।
পূজা সেরে নেন। কিন্তু যখন বলছি মহাশিবরাত্রি, তখনই স্পষ্ট- এই পূজার আদর্শ সময় রাত। সারা রাত ধরে চলে মহাশিবরাত্রির ব্রত। তাই সন্ধেবেলাতেও একবার স্নান করে শুদ্ধ হয়ে পূজার জোগাড় করুন। হাতের কাছে গুছিয়ে রাখুন জল, দুধ, দই, ঘি, মধু, ফুল, বেলপাতা, গোলাপ জল, চন্দন বাটা, কুঙ্কুম বা সিঁদুর, ধূপ, ঘিয়ের প্রদীপ, পাঁচটি ফল, মিষ্টি।
=> মহাশিবরাত্রিকে ভাগ করা হয় চারটি প্রহরে। এক একটি প্রহরে গঙ্গামাটি দিয়ে তৈরি করতে হয় একটি করে শিবলিঙ্গ। খেয়াল রাখুন, এক প্রহরের লিঙ্গের পূজা অন্য প্রহরে করা যায় না। কেন না, প্রহর ভেদে শিবের চারটি রূপের পূজা করা হয় এই রাতে। তবে, গঙ্গামাটি না পেলে বা শিবলিঙ্গ বানাতে না জানলে কালো পাথরের একটিই লিঙ্গ বা বাণলিঙ্গ, নর্মদালিঙ্গ, রত্নলিঙ্গ ইত্যাদি বিহিত আধারে পূজা করা যায়।
=> মহাশিবরাত্রির পূজার প্রথম ধাপ অভিষেক। অর্থাৎ, লিঙ্গকে স্নান করানো। প্রথম প্রহরে ‘ হৌঁ ঈশাণায় নমঃ' মন্ত্রে দুধ দিয়ে, দ্বিতীয় প্রহরে ‘ হৌঁ অঘোরায় নমঃ' মন্ত্রে দই দিয়ে, তৃতীয় প্রহরে ‘ হৌঁ বামদেবায় নমঃ' মন্ত্রে ঘি দিয়ে এবং চতুর্থ প্রহরে ‘ হৌঁ সদ্যোজাতায় নমঃ' মন্ত্রে মধু দিয়ে স্নান করিয়ে পুজো করতে হয়। এই সময় প্রার্থনা করা হয়‚ হে শিব, তোমাকে নমস্কার। তুমি সৌভাগ্য, আরোগ্য, বিদ্যা, অর্থ, স্বর্গ, অপবর্গ দিয়ে থাকো। তাই এগুলো তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। হে গৌরীপতি, তুমি আমাদের ধর্ম, জ্ঞান, সৌভাগ্য, কাম, সন্তান, আয়ু ও অপবর্গ দাও।
=> অভিষেকের পরে শিবলিঙ্গে চারপ্রহরে চারটি অর্ঘ্য দেওয়া নিয়ম। তার পর, ফুলে সাজিয়ে দিন শিবলিঙ্গ। ফুল এবং মালা দেওয়ার সময়ে উচ্চারণ করুন নমঃ শিবায়।
> তার পরে চন্দন বাটার প্রলেপ দিন শিবলিঙ্গে। চন্দনের পরে কুঙ্কুম বা সিঁদুরের আলেপন দিন।
> এর পর ধূপ এবং ঘিয়ের প্রদীপ নিয়ে "নমঃ শিবায়ঃ" মন্ত্রে আরতি করুন।
> আরতির পর ফল এবং মিষ্টি নিবেদন করুন শিবকে।
> সবার শেষে সম্ভব হলে পাঠ করুন শিবের অষ্টোত্তর শতনাম।
> প্রত্যেক প্রহরেই এভাবে পুজো করুন শিবকে। উপবাস ভঙ্গ করুন পরের দিনে।
> খেয়াল রাখবেন, মহাশিবরাত্রির পরের দিন সূর্যোদয়ের আগেই স্নান করে, চতুর্দশী তিথি থাকতে থাকতে উপবাস ভঙ্গ করতে হয়। কোনও ব্রাহ্মণের কাছে শিবরাত্রির ব্রতকথা শুনে, তাঁকে দক্ষিণা দিয়ে উপবাস ভঙ্গ করুন। নমঃ শিবায়ঃ!
---
বিধি অনুযায়ী পূজা রাত্রির চার প্রহরে চার বার ---দুধ, দই, ঘি ও মধু দিয়ে শিব স্নান কর্ত্তব্য।
-
প্রথমে ---
সঙ্কল্প -- ওঁ শিবরাত্রি ব্রতং হ্যেতৎ করিষ্যে দৃহং মহাফলং।
------- নির্বিঘ্নমস্তু মে দেব তৎপ্রাদাজ্জগৎপতে।।
-
এইবার বিধিসম্মত পূজা করে নীচে দেওয়া হল।
আসনে বসে রুদ্রাক্ষমালা, ভস্মত্রিপূণ্ড্র ধারণ করে পঞ্চবিধ শুদ্ধি, সূর্যার্ঘ্য, গুরু, ইষ্ট এবং পঞ্চদেবতার পূজা করতে হবে। বিশেষ স্নান ও অর্ঘ্য মন্ত্রে রাত্রির চার প্রহরে শিবপূজা কর্ত্তব্য।
-
প্রথম প্রহর
========
'ওঁ হৌঁ ঈশানায় নমঃ' ----মন্ত্রে দুধ দিয়ে স্নান করিয়ে পরে জলে স্নান করাতে হবে ---
অর্ঘ্য মন্ত্র --
ওঁ শিবরাত্রি ব্রতং দেব পূজাজপপরায়ণঃ।
করোমি বিধিবত্তং গৃহাণার্ঘ্যং মহেশ্বরঃ।।
---------------------------------------------
----------------------
দ্বিতীয় প্রহর
========
'ওঁ হৌঁ অঘোরায় নমঃ' ----মন্ত্রে দই দিয়ে স্নান করিয়ে পরে জলে স্নান করাতে হবে ---
অর্ঘ্য মন্ত্র --
ওঁ নমঃ শিবায় শান্তাায় সর্ব্বপাপহরায় চ।
শিবরাত্রৌ দদামর্ঘ্যং প্রসীদ উময়া সহ।।
---------------------------------------------
----------------------
তৃতীয় প্রহর
========
'ওঁ হৌঁ বামদেবায় নমঃ' ----মন্ত্রে ঘি দিয়ে স্নান করিয়ে পরে জলে স্নান করাতে হবে ---
অর্ঘ্য মন্ত্র --
ওঁ দুঃখদারিদ্রশোকেন দগ্ধোঽহং পার্বতীশ্বর।
শিবরাত্রৌ দদামর্ঘ্যং উমাকান্তং প্রসীদ মে।।
---------------------------------------------
----------------------
চতুর্থ প্রহর
========
'ওঁ হৌঁ সদ্যোজাতায় নমঃ' ----মন্ত্রে মধু দিয়ে স্নান করিয়ে পরে জলে স্নান করাতে হবে ---
অর্ঘ্য মন্ত্র --
ওঁ মমকৃত্যান্যনেকানি পাপানি হর শঙ্কর।
শিবরাত্রৌ দদামর্ঘ্যং উমাকান্তং গৃহাণ্ মে।।
প্রতিবার পূজার শেষে অষ্টমূর্তি, গৌরী, স্কন্দ, গণপতি, নন্দীশ্বরাদি শিবগণদের পূজা কর্তব্য। পূজার শেষে শিবনির্মাল্য দ্বারা চণ্ডেশ্বরের পূজা করনীয়।
যে শিবরাত্রি পূজা বিধি দেওয়া হল, তা সাধারণ ভক্ত, যারা পুরোহিত দ্বারা বা প্রতিষ্ঠিত মন্দিরে গিয়ে পূজা করবেন, তার কথা মাথায় রেখে বলা হয়েছে। যারা স্বয়ং পূজায় অধিকারী, তাদের জন্য বিধি খুব তাড়াতাড়ি দেওয়া হবে।
হর হর মহাদেব
শিবরাত্রিনির্ণয়বিষয়ে স্মার্ত ভট্টাচার্য রঘুনন্দনস্য বিধান যথা-
"যদ্দিনে প্রদোষনিশীথোভয়
ব্যাপিনী চতুর্দশী তদ্দিনে ব্রতম্। যদা তু পূর্বদ্যুনিশীথব
্যাপিনী পরেদ্যুঃ প্রদোষমাত্রব্যাপিনী তদা পূর্বেদ্যুর্ব্ব্রতম্। যদা তু ন পূর্বদ্যুনিশীথব্যাপ্তিঃ পরদিনে প্রদোষব্যাপিনী তদা পরদিনে।"
অর্থাৎ, যেইদিন চতুর্দশী প্রদোষ ও রাত্রি উভয়ব্যাপিনী হবে, সেদিন শিবরাত্রি পালনীয়। অভাবে যদি দেখা যায় যে পূর্বদিনে রাত্রি ও পরদিনে কেবল প্রদোষস্পৃষ্ট চতুর্দশী প্রাপ্তি হচ্ছে, সেক্ষেত্রে পূর্বদিনে অর্থাৎ নিশীথযুক্ত চতুর্দশীকে গ্রহণ করতে হবে। যদি তিথি পূর্বদিনে নিশা অতিক্রম করে শুরু হয়ে পরের দিন প্রদোষ নিয়ে থাকবে, তাতে পরদিবসে ব্রত পালনীয়।
পারণ বিষয়ে যথা-
পারণন্তু পরদিনে চতুর্দশীলাভে চতুর্দশ্যাং তদলাভে অমাবস্যায়াম্।
অর্থাৎ, পরদিবসে চতুর্দশী লাভে চতুর্দশীতে, না পাওয়া গেলে অমাবস্যায় পারণ কর্তব্য।
প্রমাণ বিষয়ে বিষ্ণুধর্মোত্তর, স্কন্দপুরাণ, লিঙ্গপুরাণ ও গৌতমীয় তন্ত্র দ্রষ্টব্য।
Comments
Post a Comment